প্রকাশিত: ২৪/০৪/২০১৮ ১০:৫৭ পিএম , আপডেট: ১৭/০৮/২০১৮ ৩:৪৪ এএম

হুমায়ুন রশিদ,টেকনাফ : 

টেকনাফের একটি মাদক আস্তানায় এবার খেলতে গিয়েই এক ভিক্ষুক মা ও রিক্সা চালক বাবার আদরের মেয়ে অজ্ঞাত দূর্বৃত্তদের হাতে খুন হয়েছে।

ঘাতক ও প্রভাবশালী চক্রের অব্যাহত হুমকিতে অসহায় পরিবার মুখ খুলতে রাজি না হওয়ায় স্পর্শকাতর বিষয়টি ধামা-চাপা পড়ে যাচ্ছে।

জানা যায়,২৪ এপ্রিল বাদে জোহর টেকনাফের হ্নীলা রসুলাবাদ আশ্রয়ন কেন্দ্রের ৫নং ব্যারাকের ৫নং রোমের বাসিন্দা রিক্সা চালক আবুল মঞ্জুরের মেয়ে নাছিমা আক্তার (৯) কে জানাজা শেষে নাটমোরা পাড়া গোরস্থানে দাফন করা হয়।

উল্লেখ্য,গত ২৩ এপ্রিল বাদে আছর হতে ৩ ভাই ও ৩ বোনের মধ্যে সর্বকনিষ্ট নিহত নাছিমা একই ব্যারাকের মাদক স¤্রাজ্ঞী, খলিলুর রহমান প্রকাশ খলুর মেয়ে ও মরিচ্যার বাস হেলপার সোহেলের স্ত্রী আয়েশা (৩২) এর মেয়ে কলির সাথে বন্ধুত্বের সুযোগে বাসায় গিয়ে লুডু (ছক্কা) খেলে। এর কিছুক্ষণ পর আবারো ঘুরে-ফিরে আয়েশার বাড়িতে গিয়ে বাদে এশা পর্যন্ত অবস্থান করে। এরপর হঠাৎ নাছিমা নিখোঁজ হয়ে যায়। ধারণা করা হচ্ছে মাদকাসক্ত ও কামাতুর ২/৩জন কিশোর মিলে তাকে অপহরণ করে। রাত ৯টারদিকে মা-বাবাসহ চেরাগ নিয়ে নাছিমাকে খুঁজতে বের হয়।

অবশেষে রাত পৌনে ১১টারদিকে যেখানে ৪বার তল্লাশী করা হয়েছে সেখানে জনৈক শাহ আলমের রোমের সামনে পরিত্যক্ষ,ধূলা-বালি মিশ্রিত, রক্তাক্ত চোখ, মুখের ডান পাশে এবং গলার রক্কনালীতে (শাহরগ) আঘাতের চিহ্নসহ উদ্ধার করে বাড়িতে নিয়ে আসে।

ঘটনা জানাজানি হলে স্থানীয় লোকজন বিষয়টি থানা পুলিশকে অবহিত করলে টেকনাফ মডেল থানার অফিসার্স ইনচার্জ রনজিত কুমার বড়ুয়া একদল পুলিশ নিয়ে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করলে মাদক স¤্রাজ্ঞী আয়েশা গা ঢাকা দেয়। এরপর পুলিশ মা মাবিয়া ও বাবা মঞ্জুরের নিকট মেয়ের মৃত্যুর কারণ জানতে চাইলে মেয়ে মৃগী রোগী (ছোঁয়া পিরারোগী) এবং এই কারণে তাদের মেয়ের মৃত্যু হয়েছে বলে দাবী করলে পুলিশ চলে যায়।

তবে স্থানীয় বাসিন্দারা জানায়, নিহত নাছিমা কোন সময়ে মৃগীরোগে আক্রান্ত হয়েছে তা তারা দেখেনি। হয়তো অজ্ঞাত ঘাতকদের হুমকি ও ভয়ে ভিক্ষুক মা ও রিক্সা চালক বাবা বাধ্য হয়ে ভিন্ন কথা বলছে। আর এভাবে চলতে থাকলে অন্য সাধারণ মানুষের কচি-কাঁচা শিশু মেয়েদের করুণ পরিণতির দায়-দায়িত্ব কে বহন করবে বলে প্রশ্ন তুলেছেন।

এদিকে কতিপয় প্রভাবশালী ও নেতা দ্রত সময়ের মধ্যে নিহত নাছিমার দাফন কার্য সম্পন্ন করার জন্য কড়া নির্দেশনা দিয়ে পরিবারের মধ্যে ভীতির সঞ্চার করে।

উক্ত এলাকার বিভিন্ন শ্রেণী-পেশার মানুষের সাথে আলোচনা করে শিশু নাছিমা অজ্ঞাত দূর্বৃত্তদের হাতে খুনের বিষয়টি নিশ্চিত হলেও অসহায়-দরিদ্র মাতা-পিতা যা হওয়ার হয়ে গেছে বাড়তি ঝামেলায় গেলে বড় সমস্যা পোহানোর ভয়ে তুষের আগুন বুকে ধারণ করেছে।

এদিকে কতিপয় মাদকসেবী প্রভাবশালী ও নেতার ছত্র-ছায়ায় ৫নং ব্যারাকের ৯নং রোমের স¤্রাজ্ঞী আয়েশার বাড়িতে, ৩নং ব্যারাকের ফরিদার মেয়ে ও লবণ মাঠের শ্রমিক মাঈন উদ্দিনের স্ত্রী কুইন্যারা বেগমের কক্ষে খুচরা ইয়াবা বিক্রি ও সেবনের আসর বসে এবং ৫নং ব্যারাকের ৮নং কক্ষের রবি আলমের স্ত্রী আনোয়ারা বেগম আনু খুচরা গাঁজার পুটলা বিক্রি করে পরিবেশ দূষিত করলেও প্রতিবাদ করার কেউ নেই। আবার অনেক রাঘব-বোয়াল বাহির থেকে মদ এনে আশ্রয়ন কেন্দ্রের বিভিন্ন বাসায় অবস্থান করে ফূর্তিতে মাদক সেবন করে আসছে। উক্ত আশ্রয়ন কেন্দ্রের মাদক বিক্রেতাদের বিরুদ্ধে সাড়াঁশি অভিযান পরিচালনার দাবী উঠছে।
অনেকে পুলিশ-বিজিবির অভিযানের ভয়ে ইয়াবার বড় বড় চালান এখানে লুকিয়ে রাখে। এই আশ্রয়ন কেন্দ্রটি দীর্ঘদিন ধরে মুখোশধারী মাদকসেবী ও ব্যবসায়ীদের নিরাপদ আস্তানায় পরিণত হওয়ায় সাধারণ কোন মানুষের প্রতিবাদ করার সাহস হয়নি। এই দরিদ্র পরিবারের নিষ্পাপ শিশুটির বিচার দুনিয়ার আদালতে না হলেও আল্লাহর দরবারে ঠিকই সুবিচার হবে। আর আমাদের মতো সাধারণ মানুষের শিশু মেয়ের এই করুণ পরিণতি ঘটলে কারা দায়িত্ব নেবেন।

পাঠকের মতামত

বদির কাছে হারলেন স্ত্রী

কক্সবাজার ৪ (উখিয়া-টেকনাফ) আসনের সংসদ সদস্য শাহিন আক্তারকে ৩ ভোটে পরাজিত করে উখিয়ার মরিচ্যা পালং ...